সকালে মিলবে কম দামে পণ্য। মানুষ জড়ো হয় রাতেই। টিসিবির ট্রাক এলে শুরু হয় হুড়োহুড়ি। তবে কারও কপালে মেলে, কেউ ফিরে বিষন্ন বদনে।
সকালে সাতক্ষীরা শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে বাজারদরের চেয়ে কম টাকায় পাওয়া যায় টিসিবির পণ্য। ট্রাকে করে এনে বিক্রি করা হয় চাল, ডাল, তেল, আলু।
করোনাকালে আয় কমে যাওয়া মানুষের কাছে কয়টা কম টাকায় পণ্য পাওয়া স্বস্তির খবর। তাই মানুষ আসতে থাকে রাত থেকেই। কিন্তু যত মানুষ আসে, তত পণ্য আসে না। ফলে হতাশা আর ক্ষোভ নিয়ে ফিরতে হয় অনেককে। এ নিত্যদিনের চিত্র।
পার্কের পাশেই বাড়ি সাখাওয়াতউল্যাহর। মানুষের এই কষ্ট দেখেন নিত্যদিন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন রাত ১২টার পরপরই আসতে থাকে মানুষ। বেঞ্চের উপর চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমায় তারা। ভোরের আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উঠে বসে থাকে ট্রাকের অপেক্ষায়।’
টিসিবির পণ্য কিনতে সাত কিলোমিটার দূর থেকে এসেছিলেন রইচপুর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘রাতে আসতে না পারলে জিনিস পাওয়া যায় না। সকাল হলেই ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ আসে। তাই কষ্ট হলেও আগেই আসি।’
একই কথা বলেন মুনজিতপুরের আমির আলী, রসুলপুরের আব্দুর রশিদ, পলাশপোলের রওশন আরাসহ অনেকেই।
টিসিবির পরিবেশকরা জানান, সাতক্ষীরায় টিসিবির পণ্য সরবরাহ করে ৯ থেকে ১০টি প্রতিষ্ঠান। শুক্র ও শনিবার বাদে সপ্তাহে পাঁচ দিন পর্যায়ক্রমে পণ্য বিক্রি করে তারা।
রাসেল এন্টারপ্রাইজের মালিক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রশাসন থেকে আসা মালামালের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা হয় দ্বিগুণ। মালামালের তত্ত্বাবধানে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের থাকার কথা। তাদের অনুপস্থিতিতে অনিয়ম ঘটে।’
সাতক্ষীরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি ৬০টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকা এবং পাঁচ লিটার বোতলজাত তেল ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
টিসিবির প্রতি প্যাকেজে ৫০ টাকা কেজি দরে দুই কেজি করে চিনি ও মসুর ডাল, ৩০ টাকা কেজি দরে দুই কেজি পেঁয়াজ ও পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল ৪০০ টাকা ধরে প্রতি প্যাকেজের মূল্য ধরা হয় ৬৬০ টাকা।
খোলা বাজারে প্রতিটি পণ্য কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি। আর পাঁচ লিটার তেলের দাম বেশি ১৫০ টাকা। ফলে টিসিবির এই প্যাকেজ কিনলে গ্রাহকের বাঁচে ২৮০ টাকার মতো।
প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ জনের পণ্য সরবরাহ করা হয়।
কিন্তু চাহিদার তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। বিপুলসংখ্যক ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খেতে হয় টিসিবির পণ্য সরবরাহকারী এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
সার্বিক বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল নিউজবাংলাকে জানান, সাতক্ষীরায় নদীভাঙ্গন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনা পরিস্থিতি মিলিয়ে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। টিসিবির পণ্য অনুযায়ী লোকের সংখ্যা অনেক। আবার অনেকে আছে টিসিবি থেকে পণ্য কিনে বাইরে বিক্রি করে।
তিনি আরও বলেন, ‘আগামীকাল থেকে পণ্য গ্রহণকারীর হাতে একটা বিশেষ কালি দিয়ে চিহ্ন দেয়া হবে। আর কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে।’